বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০

ব্রেকআপ - bangla story

(১) এবার আমি-ই ইরাকে এই রাস্তায় একা ফেলে চলে যাচ্ছি। ইরা অনেকটা অপ্রস্তুত একটা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আমার চলে যাওয়াটা... খুব ভোরের কোন এক কুয়াশার চাদর মাখা সকালে ইরার জন্য তরতাজা একগুচ্ছ লাল গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছিলাম আমি, এইতো এইখানে। এই কৃষ্ণচূড়া লেনে।

 ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo

প্রথম একান্তভাবে দেখা, প্রথম শুরু এবং প্রথম প্রেমের আনুষ্ঠানিকতা। ব্যাপারটাই ছিল অদ্ভুত একটা শিহরণের। কতশত পরিকল্পনা নিয়ে যে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি!  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ইরাও তার সর্বোচ্চটা ত্যাগ করে কোন রকম শীতের চাদর না জড়িয়েই লাল টুকটুকে একটা জামা পরে, পরীর ন্যায় কুয়াশা ভেদ করে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। তখন পেছন থেকে সূর্যের কিরণমালা আস্তে আস্তে তার পাখনা মেলছিল। লজ্জায় সেদিন আমি তাকাতেই পারছিলাম না ওর দিকে। সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম কী কী পরিকল্পনা ছিল। ইরা হাসছিল খুব আমার এমন অবস্থা দেখে।
বলেছিল,  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
'হয়েছে হয়েছে বোকারাম, অনেক আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে।'
বলে-ই গোলাপ ফুল এক হাতে টুপ করে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার বাহু জড়িয়ে বলেছিল,
'চলো হাঁটি এ পথ ধরে। হাঁটতে হাঁটতেই কত আপন হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।'
কত সাবলীল সূচনা-ই না ছিল আমাদের!
.
যে রাস্তায় আমাদের প্রেমের উপাখ্যান। এই রাস্তার নাম ছিল কৃষ্ণচূড়া লেন। লম্বা সোজা এক কিলোমিটার একটা রাস্তা, যার দুপাশে প্রচুর কৃষ্ণচূড়া গাছ। আমরা রোজ এই পথ ধরে একবারে শেষ প্রান্তে যেতাম আরেকবার শেষ প্রান্ত থেকে শুরুর মুখে আসতাম। ইরার সবচেয়ে প্রিয় এই পথ।
এই পথটা যে আমাদের প্রেমের কত অজস্র স্মৃতি বুকে ধারণ করে আছে তার সাক্ষী দুপাশের কৃষ্ণচূড়া গাছ। আমিতো এই রাস্তার দু’পাশে কতগুলো গাছ আছে, কতগুলো বিল্ডিং আছে, কোন বিল্ডিং এর কালার কীরকম, কোনটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এবং আবার কালার করাতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি এসব মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। তারপর...

ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ব্রেক‌আপ-bangla story

(২)
বেশ অনেকদিন পর একদিন হঠাৎ ইরা ফোন করে বলেছিল;
- কেমন আছ রবিন?
- কে বলছিলেন?
- ওমা ভুলে গেছ? আমি ইরা।
- এতদিন পরে কী মনে করে?
- দেখা করবা একটু?
- কোথায়?  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
- কৃষ্ণচূড়া লেন?
- হুম ঠিক আছে, কখন আসবো?
- খুব ভোরে। প্রথমদিন যে সময়টায় আমরা দেখা করেছিলাম, সেসময়ে।
সেদিন ভোর থেকেই প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি কৃষ্ণচূড়া লেনের একপাশে একটা ছাউনিতে দৌড়ে এসে কাঁকভেজা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। ইরাও দৌড়ে রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বৃষ্টির জন্য আবছা দেখতে পারছিলাম ইরাকে। টানা এক ঘন্টা বৃষ্টির পর কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো তাদের ফুল রাস্তায় লাল গালিচার মত বিছিয়ে দিয়েছিল। মাঝ রাস্তায় যখন আমি আসলাম ইরা বিপরীত পাশ থেকে দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,
'আ'ম স্যরি রবিন, আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমাকে একটুখানি শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আবার। আমি আর কোনদিন তোমাকে ছেড়ে যাবো না। কক্ষনো না, প্রমিস...'
(৩)  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
শেষবার যখন কৃষ্ণচূড়া লেনে আমাদের দেখা হয় তখন ছিল চৈত্রের কাঠফাটা রোদ। ঘেমে টেমে একাকার হয়ে দৌড়ে এসে এভাবেই ইরার হাত ধরে খুব কান্নাকাটি করে বলেছিলাম;
- হঠাৎ কী হল ইরা? আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাওয়ার মানে কী? আমার দোষ কী? কতদিন দেখা হয়না আমাদের। তুমি জানো আমি কতটা শ্বাসকষ্টে ভুগছি? তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া কতটা কষ্ট হয় আমার? কেন এমনটা করছো আমার সাথে?  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
আমি তোমাকে ছাড়া মরে যাবো দেইখ। সবাই বলছে তুমি নাকি মামুন স্যারের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছো। বলো এটা মিথ্যা। এটা আমি বিশ্বাস করিনা ইরা।
- হাত ছাড়ো রবিন। একটা জিনিস ভেবে দেখলাম খুব। তোমার এই এলোমেলো জীবনে আমি আমার জীবনটাকেও হেলায় ভাসিয়ে দিচ্ছি। এভাবে তো আর জীবন চলবে না। কাম টু দ্য রিয়েলিটি, বাস্তবতায় আসতে হবে আমাদের। তোমাকেও বুঝতে হবে। আর মামুন স্যারের সাথে আমি সম্পর্কে আছি বিষয়টা এমন না। শুধুমাত্র উনি বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাসায়। সবাই রাজি।
- তুমিও রাজি?
- আমি তো বললাম রবিন, আবেগ দিয়ে কতদিন? তোমার বাউণ্ডুলে জীবন যাপন দিয়ে আমার কী লাভ ভেবেছো?
- লাভ লস তো ইরা ব্যবসা বাণিজ্যে হয়। এখনও তো আরো এক বছর পড়াশোনার বাকি আমার। তোমার তো তিন বছর বাকি আছে, তারপরেও কিসের এত তাড়া ইরা? আমাকে একটু সময় দাও, আমি নিজেকে গুছিয়ে ফেলবো দেইখ।
- প্লিজ রবিন বুঝার চেষ্টা করো। বাসার সবাই রাজি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। গেলাম।
ইরা চলে গিয়েছিল। একবারের জন্যও পিছু ফেরেনি। আমি অপ্রস্তুত একটা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ইরার চলে যাওয়াটা।
(৪)  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ইরার সাথে সম্পর্কটা আমার ভার্সিটিতে-ই হয়। আমি দিব্যি পড়াশোনা আকাশে তুলে সারাক্ষণ ইরার আশেপাশেই থাকতাম। এক বন্ধু বুদ্ধি দিয়েছিল একটু বেহায়া না হলে নাকি মেয়ে পটে না। তাই বেহায়াও বনে গিয়েছিলাম খুব। তারপর একদিন ওর বান্ধবীকে ঘুষ খাইয়ে ইরার ফোন নাম্বারটা আনা। তারপর কথা বলা, আস্তে আস্তে ভালো লাগার শুরু একদিন চোখ মুখ বন্ধ করে 'আই লাভ ইউ' বলে ফেলা এবং অবশেষে একান্ত দেখা করার পরেই এই সম্পর্কটা জন্ম নিয়েছিল। এখনও অনুভূতিগুলো আমার কত তরতাজা।
ইরার আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসে আমাদের সম্পর্কের বেশ অনেকদিন কেটে যাওয়ার পরে। তখন ইরার মধ্যে নতুন নতুন আকাঙ্ক্ষা আমি লক্ষ্য করছিলাম। ইরা পাল্টে যাচ্ছিল। বিভিন্ন অজুহাত শুরু হলো তার। আমার সাথে আস্তে আস্তে একটা গ্যাপ তৈরি করে দিচ্ছিল। অবশেষে জানতে পেরেছিলাম আমার জীবনে নতুন বাধা হয়ে এসেছেন মামুন স্যার। ডিপার্টমেন্টের প্রিয় মুখ। ফ্যাকাল্টি। তার নজর ঘুরেফিরে ইরার উপর পড়বে এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মামুন স্যার আমাকে ভালো করেই জানতো এবং চিনতো। ইরা আর আমার ব্যাপারটা সে ক্যাম্পাসের বাতাসেই জেনে গিয়েছিল কিন্তু তারপরেও উনি কেন এমনটা করলো এটা জানার খুব ইচ্ছা জেগেছিল মনের মধ্যে।
ইরাকে শত চেষ্টায়ও আর ফেরাতে পারিনি...
.
একদিন সন্ধ্যায় মামুন স্যারকে এই কৃষ্ণচূড়া লেনেই হঠাৎ করে পেয়েছিলাম, উনি জগিং করতে এসেছিলেন। রাস্তা আটকে বলেছিলাম;
- স্যার একটু কথা ছিল।
- কী রবিন, কী অবস্থা তোমার?
- স্যার ইরাকে খুব বেশি ভালোবাসি আমি, খুব বেশি। জানতেন না? আমি জানি আপনি সেটা জানতেন। তাও এমনটা হল ক্যান?
মামুন স্যার একটু থমকে গিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিল;
- হুমম শান্ত হও। সিগারেট খাবা? ডোন্ট মাইন্ড খেতে পারো। এই নাও সুইচ, খেলে ঠান্ডা ফিল আসবে। আসো কোথাও বসি।
সেদিন লেনের পাশে ফুটপাথে বসে অবলীলায় মামুন স্যারের সাথে সিগারেট ফুঁকছিলাম। খুব যে স্বাভাবিক চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আমি ছিলামনা এটা পরিষ্কার।
মেয়েটা আমাকে হঠাৎ এলোমেলো করে এভাবে চলে যাবে এটাকে সহজভাবে নিতে পারিনি।
স্যার বলেছিল;  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
- দেখো রবিন বিষয়টা আমি জানতাম। তারপর যা বুঝলাম, ইরা তোমার সাথে যায়না। ওর টার্গেটটা-ই একটু আলাদা এবং অন্যরকম, যেটা আমার চোখে বেশ ধরেছে। তুমি হয়তো ভাবছো আমিই তাকে আমার করে নিতে চাচ্ছি কিংবা নিজ থেকে বিয়ের প্রস্তাব করেছি। কিন্তু ঘটনা অন্যরকম, সে একদম নিজ থেকেই পজিটিভ একটা ইংগিত করছিল অনেকদিন যাবত। আমি সামাজিক ভাবে শুধুমাত্র ওর পরিবারকে জানিয়েছি, তারা সবাই প্রস্তুত এবং এরমধ্যে ইরা বোধহয় সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত।
বরং ভালো, ভুলে যাও ওসব। আর ভেবোনা। ভেবে লাভও নেই।
-
হুমম তারপর ভুলে গিয়েছিলাম সব। ইরাও আমাকে ভুলে গেল। ও একটা ফ্যান্টাসিতে পড়েই হয়তো আমাকে ভালোবেসেছিল। একটু একটু দিন কেটে গেল, ম্যাচিউরিটি গ্রোথ হলো, ডিমান্ড চেঞ্জ হলো আর আমাকে তার জীবন থেকে সরিয়ে ফেললো। আমিও এতই ভালোবাসছিলাম যে সে আমাকে তার অযোগ্য মনে করা শুরু করেছিল সম্ভবত।
যাইহোক ভুলে গিয়েছিলাম। যদিও ভাবনায় স্বাভাবিকতা আনতে আমাকে কী পরিমাণ যুদ্ধ করতে হয়েছে সেটা একমাত্র উপরওয়ালা আর আমিই জানি। ইরাকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা ছিল দম আটকে মরে যাওয়ার মত। আরেকবার লাস্ট দেখা হয়েছিল মামুন স্যারের সাথে। সেদিনকার সময়টা আমাকে নতুন করে যেন জন্ম দিয়েছিল...
(৫)  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ইরার বিয়ের খবরটা আমার কানে আসে ওর বিয়ের প্রায় দেড় মাস পর। মানে হারিয়েই গিয়েছিল আমার কাছ থেকে। কত খুঁজেছি আর একটিবার দেখা করার জন্য। ছটফট করেছি সারাক্ষণ। এর মধ্যে কত নিখুঁত ভাবেই না আমাকে ফাঁকি দিয়ে সে সংসার করছিল।
একদিন পাগলামি করে ছুটেও গেলাম সরকারি কলেজ কোয়ার্টার, ওকে দেখবো বলে। অনেক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ একবার বারান্দায় আসছিল ইরা। কত সুখি আর হাস্যোজ্জল আমার ইরা!
আমি হাত তুলতেই আমাকে দেখে দরজা বন্ধ করে ভেতরে চলে গেল। আচ্ছা আজকে ওকে একটু দেখতেও কী পাপ? আমার অপরাধটা কী ছিল, যদি একবার ইরা বলতো!
এভাবে একসময় সারাক্ষণ ওর বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে থাকতাম। মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হতো নিজেকে। একদিন ওকে বাসার নিচে পেয়ে গেলাম। যেই আমাকে দেখে দৌড়ে বাসায় উঠবে ঠিক তখনই ওর হাতটা খপ ধরে ফেলি। ও ভয়ে চিৎকার করে ওর স্বামীকে ডাকছিল;
মামুন আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও! আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ওকে দেখছিলাম আর এটাই ভাবছিলাম, আমি কী ওকে মেরে ফেলছি? হাতটা ধরে দাঁড় করালাম কেবল। ইরা কাঁপছিল ভয়ে। আচ্ছা আমি কী নিকৃষ্ট কোন জানোয়ার? ইরা আমাকে এত ভয় পাচ্ছে কেন আজ?
এরকমটা ভাবতে ভাবতেই মামুন স্যার দৌড়ে এসে আমাকে ধরে বললো;
'কুত্তারবাচ্চা তোর এতবড় সাহস!' এটা বলেই সজোরে আমার নাক বরাবর একটা ঘুসি মারলো। আমার চোখে যেন একটা বিদুৎ রেখা এঁকে গেল। ছিটকে দূরে পড়ে গেলাম। নাক বেয়ে রক্ত পড়ছিল অঝোরে। কয়েকটা উপর্যুপরি লাথিও খেয়েছিলাম সেদিন। মাটিতে পড়ে খুব কষ্ট করে তাকিয়ে দেখছিলাম আমার ইরা ওর স্বামীর বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর কীভাবে ভয় কাটাচ্ছে। যেন শেষমেষ বাঁচার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। কত অদ্ভুত এই দৃশ্য!...
.
একদিন লুকিয়ে ইরাকে নিয়ে চাঁদনী রাতে পাঁচ মিনিটের জন্য ওকে বাসা থেকে নামিয়ে আমার বাইসাইকেলে করে কৃষ্ণচূড়া লেনে নিয়ে এসেছিলাম। ইরার জন্মদিন ছিল। সারাদিনে ওকে এক মুহূর্তের জন্যও পাইনি। তাই সন্ধ্যায় এসেছি ওর সাথে দেখা করতে। কোনরকম নিচে নামিয়েই বললাম ঝটপট ওঠে পড়ো। সাইকেলে চড়ে একদম কৃষ্ণচূড়া লেন। নামিয়ে পকেট থেকে একটা ম্যাচ একটা মোমবাতি আর ছোট একটা কেক ছিলো সাইকেলের হাতলে।
কোনরকম সাইকেলের বসার সিটে কেক রেখে মোমবাতি জ্বালিয়ে বলেছিলাম তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে নিভাও। এই মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল। আমি আবার বললাম; কী হল ফুঁ দাও। কোনরকম ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল। কেক লেপ্টে সারা গায়ে লেগে গিয়েছিল আমার। সেদিনও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিল সমস্ত সুখের আশ্রয় তার আমার এই বুকে। এই বুকে জড়িয়ে রাখলে ও পৃথিবীর কোন ভয়কে নাকি তোয়াক্কা করে না। আমার বুকেই তার সমস্ত অভয় ছিল!
বাসায় পৌঁছে দেওয়ার সময় সারাটা পথ সাইকেলের পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল ইরা।
আমার স্বপ্নটাকে কত উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল ইরা, তা সে নিজেই জানতো না।
.
তিন বছর পর আবার সেই ইরা হঠাৎ আমাকে ফোন করে আসতে বললো এই কৃষ্ণচূড়া লেনে। একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যেন চলে এসেছিলাম।  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ইরা এখনও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। ক্ষমা চাচ্ছে খুব। ঝিরঝির করে বৃষ্টিটা আবার শুরু হয়েছে।
মনে মনে বললাম আমি তো সেদিনই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম তাকে, যেদিন আমার ভয়ে সে আরেকজনের বুকে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
যাক সম্পর্কটা আবার শুরু করলাম। জানিনা কী এক অদ্ভুত মায়ায় বারবার ইচ্ছে করেই আমি ডুবে যাই ওর প্রতি। ওর চোখে অদ্ভুত মায়া আছে, খুব গভীর মায়া! তাকালেই আমি ডুবে তলিয়ে যাই।
মামুন স্যারের সাথে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার কারণও আমি আজ জানতে চাইনি। ইচ্ছে করছিল না। সে-ই নানান অভিযোগ শোনাচ্ছে মামুন স্যারের। তাকে নাকি গায়ে হাত তুলতো খুব। প্রতিদিন। আমার এতো মায়ার মানুষকে কেউ মারছে, আঘাত করবে এটা কল্পনাও করতে পারছিনা।
ইরা নাকি তার ভুল বুঝতে পেরেছে, সে ভুল মানুষকে ভালোবাসছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি বলেই যাচ্ছে এই কদিন। আমাকে কখনো ভলোবাসছিল কিনা বলেনি।
যাইহোক, আবার এই কৃষ্ণচূড়া লেন যেন প্রাণ ফিরে পেলো। দুজনে আবার এই পথে হাঁটাহাঁটি। আবার প্রেম, আমার স্বপ্ন বোনা। এবার ইরার স্বপ্নগুলো যেন নড়েচড়ে উঠেছে। আমরা বিয়ের পর এই করবো, ওই পরবো, এখানে যাবো ওখানে যাবো, কত স্বপ্ন! আমি শুধু অবাক হয়ে ওকেই দেখি। ইরা আমাকে সেদিন হাঁটতে হাঁটতে বলেছিল;
- রবিন তুমি না কেমন যেন হয়ে গিয়েছো।
- কেমন?  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
- এইযে, চুপচাপ শান্ত পরিপাটি।
- হাহাহা এটা নিয়েই তো অভিযোগ ছিল তোমার।
- নাহ্ আমার ছটফটে রবিনটাকে-ই চাই। আমি চাই আবার পাগলের মত তুমি আমাকে ভালোবাসো।
- আসলে বয়স হয়েছে বোধহয় সেজন্য একটু চুপচাপ।
- আচ্ছা রবিন তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?
- হুমম অবশ্যই।
- কীভাবে বুঝবো?
- এইযে এভাবে বুঝবা।
- এভাবে কীভাবে?
- ধরো আমি ভাত খাচ্ছি। তুমি হঠাৎ আমাকে দেখলে আর বললে, 'রবিন তুমি কি ভাত খাচ্ছো?' তখন আমার কী জবাব দেয়া উচিত? এইযে আমরা হাতে হাত রেখে হাঁটছি তাও তুমি এই প্রশ্ন করলে, এখন আমার কী জবাব দেয়া উচিত?
- হাহাহা সেইই উদাহরণ তো!
- হুমম।
আচ্ছা তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো ইরা?
- অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।
- আগের মতো?
- হ্যা এবং আগের চাইতেও বেশি।
ইরা আমার বাহু জড়িয়ে হাঁটছে। কতটা সহজ নির্লিপ্ত এই মেয়ে। একটুখানি অনুশোচনা একটুখানি অপরাধবোধের ছিটেফোঁটার অবকাশ নেই ওর চোখে। কত সহজ জীবন। সে আগের মতোই আমাকে ভালোবাসে।
(শেষ)
ছয়মাস কেটে যাওয়ার পর, আজকে ইরা খুব বেশি খুশি। আমাকে ফোন করে বললো, ওর আর আমার বিয়ের জন্য পরিবারের সবাই নাকি রাজি। একটা মেয়ে জীবনে প্রথম যখন তার ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করার মত সুযোগ পায়, কিংবা প্রথম বিয়ের অনুভূতি, ঠিক এমনটাই আনন্দিত উচ্ছ্বসিত এখন সে। আমি যারপরনাই অবাক হয়ে যাচ্ছি।
আগামীকাল আমরা ভোরে কৃষ্ণচূড়া লেনে দেখা করবো। বিয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। ইরা শর্ত দিয়েছে কালকে যেন শক্ত করে ওর হাতটি ধরে রাখি আমি। কোনদিন যেন আর না ছাড়ি। আমিও কথা দিয়েছি, ছাড়বো না হাত।
.
ভোরের সকাল। ঠান্ডা নামিয়েছে খুব। চারদিকে কুয়াশা। আজকেও ইরা লাল শাড়ি পরে এসেছে। আজকে ও সবচেয়ে বেশি খুশি। আমাকে পেতে যাচ্ছে সারাজীবনের জন্য। আমারও খুশি হওয়া উচিত।
কিন্তু আশ্চর্য যে আমি শত চেষ্টাতেও খুশি হতে পারছি না। একদমই না। কসম আজকের এই লাল শাড়ি পরা টুকটুকে ইরাটাকে দুনিয়ার বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে যেন। এই কৃষ্ণচূড়া লেন এত মরা মরা ভাব আগে কোনদিনও আমি দেখিনি। কুয়াশা ভেদ করে আস্তে আস্তে ফুটে ওঠা সূর্যের কিরণমালাটাও যেন খুব চোখে ধরছে আজকে। ইরা আমার হাতের আঙুলে ওর আঙুল চেপে হাঁটছে, আমি প্রশ্ন করলাম;
- আচ্ছা ইরা বাসায় সবাই রাজি?
- হুমম সবাই।
- তোমার বাবা তো আমাকেই দেখতেই পারতেন না। আমাকে সামনে পেলে থাবড়িয়ে লাল করে ফেলবেন এমন হুংকার দিয়েছিলেন, তুমিই তো বলেছিলে।
- হাহাহা আহা শুনো, আগে তুমি কিছুই করতে না। এখন তুমি অনেক ভালো একটা জব করছো অনেক পরিপাটি আর গুছানো একটা ছেলে হয়েছো। এখন তো আব্বু এক কথায় এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি।
- কিন্তু ইরা একটা কথা।
- কি?
- আমি বোধহয় এই বিয়েতে রাজি না।
- রবিন প্লিজ মজা করো না তো। ভাল্লাগেনা তোমার এমন মজা করা।
- আমি সিরিয়াস ইরা। আমি এই কয়েক মাস অনেক বেশি চেষ্টা করেছি তোমাকে ভালোবাসতে, কিন্তু পারিনি। আমি জানতাম আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং সে কারণেই বলতাম তোমাকে। কিন্তু খুব করে চেয়েছি আমার আগের ইরাটাকে খুঁজে বের করতে, আগের মত করে ভালোবাসতে। আগের মুহূর্তটাকে আমি ফিরে পাচ্ছি না ইরা। চেষ্টা করেছি। সবটাই মিছে আর ভিত্তিহীন লাগছে আমার। পারছি না আমি। তুমি নাহয় আবার ভুলে যাও আমাকে। খুব অসহ্য লাগছে তোমাকে কাছে পেয়ে। আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
মনে মনে বলছি, 'জীবন তো আর আবেগ দিয়ে চলেনা, তুমিই শিখিয়েছিলে ইরা। বলেছিলে; কাম টু দ্য রিয়েলিটি, বাস্তবতায় আসতে হবে আমাদের। আমিও সেটাই বলি। বাস্তবতা আজকে আর তোমাকে চায় না। ফিরে যাও।'
হাতটা আলতো করে ছাড়িয়ে নিলাম।
শেষ বারের মত,  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
এবার আমি-ই ইরাকে এই রাস্তায় একা ফেলে চলে যাচ্ছি। ইরা অনেকটা অপ্রস্তুত একটা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আমার চলে যাওয়াটা। আর ফিরছি না এই চিরচেনা পথে আর কোন প্রেমের উপাখ্যান যেন না হয় এই কৃষ্ণচূড়া লেনে।  ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo

লেখক - Bablu Ahmed Robin
Disqus Comments