রাত ১০ টা বাজে। বাজারে খুব বেশি লোকজন নেই। আমিও দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাবো ভাবছি। বাজার থেকে আমাদের বাড়ি কাছেই। পায়ে হেঁটে মিনিট পাঁচেক লাগে। হিসেব করে দেখলাম, আজকে একদিনেই দুই হাজার টাকা বাকী পরেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমার ব্যবসা শেষ হয়ে যাবে। গ্রামের মানুষ যখন বাকীতে চাল ডাল নেয়, তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি না করতে পারিনা। এই নিয়ে আমার মা সব সময় আমাকে নানান কথা বলেন। আমি প্রতিদিনই বাড়ি থেকে প্রতিজ্ঞা করে আসি,আজকে থেকে বাকী বিক্রি বন্ধ। কিন্তু পারি না। একসময় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এখন আর তেমন একটা কষ্ট হয় না। এখন আমার দোকানের অবস্থা খারাপ হলেও ইনকামের আরেকটি উৎস তৈরি হয়েছে। আমার ভাইয়ের সরকারি চাকরি হয়েছে। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০
যোগ্যতা - Bangla Story
দোকান থেকে কিছু চকলেট ও একটা আইসক্রিম নিলাম। এগুলো নীলার জন্য। নীলা আমার মামাতো বোন। আমাদের বাড়িতে থাকে। এবার এইচ. এস. সি. দিবে। আমাদের বাড়ি থেকে কলেজ খুব কাছে তাই বছর দুয়েক থেকে এখানেই থাকে। বেশ লক্ষী মেয়ে। বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ মায়ের সাথেই থাকে। আমার জামা কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে অনেক কাজেই আমাকে সাহায্য করে। যদি দু একদিনের জন্য নীলা ওদের বাড়িতে চলে যায় তখন আমার মায়ের খুব কষ্ট হয়। আমারও খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমার কষ্টের কথাটা কেউ জানেনা। আমি গোপন রাখি। কষ্টের কথা জেনে গেলে কী ভাববে সবাই। এই ভয়ে সব কথা গোপন রাখি। প্রতিদিন চকলেট ও আইসক্রিম গোপনেই নীলাকে দেই। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
বাড়ির সামনে এসে পড়েছি। দরজায় নক করলাম। নীলার হাসি মুখ। চকলেট ও আইসক্রিম হাতে দিলাম। নীলা বললো, ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
- ভাইয়া, এগুলো কি প্রতিদিনই আনতে হয়? মাঝে মাঝে দু একদিন আনলেই তো হয়।
আমিও তাই ভাবছি। মাঝে মাঝে দু একদিন আনলেই তো হয়। কিন্তু আমার মন মানে না।
আজকে মায়ের শরীরটা ভাল নেই। বিছানায় শুয়ে আছেন। আমি কাছে গেলাম। প্রেশার বেড়েছে। নীলাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- মাকে ঔষধ দিয়েছো?
- হ্যাঁ দিয়েছি।
মা ঘুমিয়েছে। আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে গেলাম। নীলা আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকে খাবার বেড়ে দেয়ার কাজটি মা করেন না। নীলাই করে। এসব কাজ নীলা খুব উপভোগ করে। এ জন্য নীলার প্রতি মা বেশ খুশি। সুযোগ পেলে রান্নার কাজও নীলা করে। নীলা বললো,
- ভাইয়া, কাল সকালে আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে পারবে?
আমি বললাম, কেন?
- কলেজ দুদিন বন্ধ তো তাই।
নীলা বাড়ি যাবে শুনেই আমার মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো।
খাবার শেষ করে মায়ের রুমে গেলাম। মা ঘুমাচ্ছে। নীলার রুমে উঁকি দিলাম। নীলা পড়ছে। আমাকে দেখে বললো,
- ভাইয়া , কিছু লাগবে?
- না কিছু লাগবে না।
আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। আমার মশাড়িটাও নীলা টাঙ্গিয়ে দেয়।
আমি নীলার উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। কিন্তু এর শেষ কোথায়? নীলা তো একদিন এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। সেদিন কী হবে? সেদিনের কথা মনে হলে বুকের বাঁ পাশে চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব হয়।
নীলা আমাকে প্রায়ই বলে, ভাইয়া তুমি বিয়ে করে ফেল। তখন ফুফুর সেবা করার জন্য একজন লোক পাওয়া যাবে।
বিয়ে তো আমি করতেই চাই। কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক মত হচ্ছে না। অনেকবার পাত্রীপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছে। আমাকে নাকি পছন্দ হয় না। পছন্দ অবশ্য না হওয়ারই কথা। আমার গায়ের রং কালো। কালো বলতে একদম কুচকুচে কালো। লেখাপড়ার অবস্থা তো আরও খারাপ। দুইবার এস. এস. সি. দিয়েও পাশ করতে পারিনি। সব মিলিয়ে পাত্র হিসেবে বড্ড অযোগ্য আমি। তাই মা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। মা এখন আর আমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলেন না। আমার ভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে মাকে কথা বলতে শুনেছি। আমার ভাইয়ের নাম দীপু। আমরা যমজ। তবে একটু অন্যরকম যমজ। আমাদের চেহারায় কোন মিল নেই। আমার ভাই দেখতে অনেক সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা, উচা লম্বা। তুখোড় মেধাবী ছাত্র । ছোটবেলার কথা মনে উঠলে এখনো হাসি পায়। আমি তো পড়ালেখা একদমই পারতাম না। আর আমার ভাই ক্লাসের ফার্স্ট বয়। দীপু প্রথমে নিজের খাতায় লিখে তারপর আমার খাতা লিখে দিতো। এভাবে প্রায়ই স্যারদের মাইরের হাত থেকে রেহাই পেয়েছি। দুইভাইয়ের সম্পর্ক বন্ধুর মত। আমরা সব সময় একই রকম জামা পরতাম। রাস্তা দিয়ে হাঁটলে মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতো। স্কুল শেষে আমরা দোকানে যেতাম। বাবা দুজনকে পাঁচ টাকা করে দিতেন। টাকা দিয়ে আমরা লজেন্স, আইসক্রিম খেতাম। একদিন একটা বিশাল কান্ড ঘটে গেল। বিকেল বেলা খেলার মাঠে একটা ছেলের সাথে দীপুর মারামারি লেগেছে। আমি মাঠে ছিলাম না। কেউ একজন খবরটা আমার কানে পৌঁছালো। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠে গেলাম। এরপর দুইভাই মিলে ছেলেটাকে ধোলাই দিয়েছিলাম। এজন্য বাবা আমাদের সাথে অনেক বকাবকি করেছিলেন।
একসময় ক্লাস টেন এ উঠলাম। মা বাবার সব চিন্তা আমাকে নিয়ে। এই ছেলেকে কীভাবে পাশ করানো যায়। দুইজন মাষ্টার রাখা হলো বাসায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। ফেল করলাম। আর আমার ভাই এ প্লাস পেলো। আমার কোনো কষ্টই হচ্ছে না। আমি না পারলেও দীপু তো পেরেছে এতেই শান্তি। মা অনেক কান্নাকাটি করলেন। কিন্তু বাবা আমাকে বললেন,
- আরে পাগল একবার ফেল করলে কিছুই হয়না। তুই আবার পরীক্ষা দিবি।
বাবার কথাতে আমি সাহস পেলাম। আমি আবারো পড়ালেখা শুরু করলাম। আমার ভাই দীপু কলেজে ভর্তি হয়ে গেল। ওর নতুন অনেক বন্ধু তৈরি হলো। তারপরেও আমাদের মধ্যে সম্পর্ক অটুট রইলো। সংসারের খরচ বেড়ে গেল। একটা মাত্র দোকান নিয়ে বাবা হিমশিম খেতে লাগলেন। হাজার কষ্টের মাঝেও বাবা ভেঙে পড়েননি। আমাকে অনেক সাহস দিতেন।
একদিন স্কুল থেকে বাড়ি গিয়ে দেখি বাবা শুয়ে আছেন। বিছানার চারপাশে অনেক লোকজন। মা কাঁদছে। আমি বাবার কাছে গেলাম । দীপু কলেজ থেকে এখনো ফিরেনি। বাবা আমার হাতটি ধরলেন। কী যেন বলতে চাইলেন কিন্তু পারলেন না। বাবার হাত পা কেমন যেন করছে।
বাবা মারা গেলেন। মা চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর দীপু আসলো। দুই ভাই গলাগলি বেঁধে কাঁদলাম সারা বিকেল।
বাবাকে হারিয়ে আমরা একদম দিশেহারা। মা চিন্তায় পড়ে গেলেন। কীভাবে সংসার চলবে? আমি দোকানে বসতে শুরু করলাম। দীপুকে বললাম,
- একটুও ভেঙে পড়বি না। বাবা নেই তো কী হয়েছে, আমি আছি না!!
দীপুকে কখনো দোকানে বসতে দেইনি। আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। সকালে পরীক্ষা দিয়ে বিকেলে দোকানে বেঁচা বিক্রি করতাম। খুব কষ্ট হতো। দোকানের অনেক কিছুই আমি বুঝতাম না। বাবা যেসব লোকদের কাছে টাকা পেতেন তাঁরা সবাই যেন উধাও হয়ে গেল।
পরীক্ষায় আমি এবারও ফেল করলাম। খুব কষ্ট লাগলো। বাবার কবরের কাছে গিয়ে কেঁদেছিলাম অনেক্ষণ।
মা বললেন,
- পড়ালেখা এবার বাদ দাও। দোকানটায় ঠিকমত সময় দাও।
আমি সাতপাঁচ না ভেবে মায়ের কথা মত দোকানে নতুন করে মালামাল তুললাম।
দীপু এইচ. এস. সি. তেও এ প্লাস পেলো। সেদিনও আমরা দুইভাই বাবার কবরের কাছে গিয়ে কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ।
দীপু বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল। আমি পুরো গ্রামে মিষ্টি বিতরণ করেছি। দীপুকে বললাম,
- টাকার জন্য কখনো ভাববি না। যেভাবে হোক পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে।
দীপু ঢাকায় চলে গেল।
মাকে বছরে একটার বেশি শাড়ী দিতে পারিনি। আমি একটা জামা দিয়ে পুরো বছর পাড় করেছি। প্রত্যেক মাসের শুরুতেই দীপুকে টাকা পাঠিয়েছি।
আমার ভাই অনার্স, মাষ্টার্স শেষ করেছে।
এখন আমরা অনেক ভালো আছি। বছরখানেক হলো দীপু সরকারি চাকরি পেয়েছে। প্রতিমাসে বাড়িতে টাকা পাঠায়। চাকরির প্রথম বেতন দিয়ে আমাকে একটা দামী মোবাইল কিনে দিয়েছে।
পাত্র হিসেবে আমি অযোগ্য তার আরো একটি কারণ আছে। অনেকেই বলে আমি নাকি একটু বলদ টাইপের। কিন্তু আমি এসব বিশ্বাস করিনা। কারণ আমার ভাই দীপু বলেছে,আমি নাকি মাটির মানুষ। আমার ভাই কখনো মিথ্যা কথা বলে না।
পরেরদিন সকালে মা আমাকে ঘুম থেকে উঠালেন। মা সুস্থ হয়েছেন । সকালের নাস্তা খেয়ে নীলাকে নিয়ে মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বিকেলের মধ্যে আবার ফিরতে হবে। একটা রিক্সায় উঠলাম। বিলের মধ্যদিয়ে রাস্তা। রাস্তার দুপাশে থই থই পানি। মৃদু বাতাস বইছে। সকালের মিষ্টি রোদ এসে পড়েছে নীলার মুখে। খুব সুন্দর লাগছে নীলাকে। আমি বললাম,
- কবে আসবে?
- তুমি যেদিন আনতে যাবে।
নীলা আমাকে তুমি করে বলে। আমিও তুমি করে বলি। তবে মায়ের সামনে তুই করে বলি। যখন তুমি করে বলি তখন নীলা হেসে বলে, হঠাৎ করে তুমি হয়ে গেলাম? আমি লজ্জায় আর কিছু বলতে পারিনা।
রিক্সা চলছে। নীলা বললো,
- পরীক্ষা শেষ হলে আমি তো আমাদের বাড়িতেই থাকবো। তখন কী হবে? ফুফুকে কে দেখবে?
আমি কিছু না বলে অন্যদিকে তাকালাম। আমার মনের অবস্থা নীলা বুঝতে পেরেছে হয়তো।
বিলের মাঝে শাপলা ফুঁটেছে। থই থই পানিতে শাপলা দেখতে খুব ভালো লাগছে। নীলা বললো,
- ভাইয়া চলো না শাপলা তুলতে যাই।
- পাগল নাকি? তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আমাকে আবার ফিরতে হবে। দেরি হয়ে যাবে।
আমার কথা শুনে মন খারাপ করলো নীলা। মুখ গোমড়া করে বসে রইলো। নীলার গোমড়া মুখ আমার ভালো লাগছে না। রিক্সা থামাতে বললাম।একটু দূরে একটা নৌকা বাঁধা আছে। নৌকায় উঠলাম দুজন। আমি নৌকা বাইছি , আর নীলা ওর হাত দিয়ে শাপলা ফুল ছুঁয়ে দেখছে। নীলাকে নিয়ে এভাবে কখনো বাইরে বের হইনি। ওর মধ্যে যে এমন একটা শিশুসুলভ মন আছে তা এতদিন বুঝতে পারিনি। মেয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের লুকানো সৌন্দর্য থাকে , যা প্রকৃতির কাছে গেলে প্রকাশ পায়।
দুপুরেরদিকে নীলাদের বাড়িতে পৌঁছলাম। আমাকে এটা সেটা খাওয়ানোর জন্য নীলা ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। নীলার এমন আচরণ দেখে মামী না জানি কী মনে করেন।
আমার ফেরার সময় হয়েছে। নীলাকে বললাম, -তাড়াতাড়ি চলে এসো।
নীলা হেসে বললো, ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
- তুমি এসে নিয়ে যেও।
এই কথাগুলো শুধু তাদেরই বলা যায় , যাদের সাথে গভীর সম্পর্ক থাকে। তবে কি নীলার সাথে আমার গভীর সম্পর্ক আছে? এর উত্তর আমার জানা নেই।
আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাড়িতে না গিয়ে সরাসরি দোকানে গেলাম। আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো। দীপু কল করেছে। সপ্তাখানেকের ছুটি আছে। বাড়ি আসতে চায়। আমি বললাম, কালকেই চলে আয়।
দীপু আসবে খবরটা মাকে দিতে হবে।দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গেলাম। মামা বাড়ির খবর জানতে চাইলেন মা। আমি বললাম, মা কালকে দীপু আসবে। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
মা বললেন, আমিই দীপুকে আসতে বলেছি। এবারের ছুটিতে একটা বিয়ে সাদি দিতে হবে।
আমি তো খুব খুশি । দীপুর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক প্ল্যান আছে। কত কিছু করবো! মা বললেন, আমার কাছে বস। আমি মায়ের একদম কাছে গিয়ে বসলাম।
মা যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু বলেন তখন একদম কাছে ডাকেন। মা বললেন,
-নীলা তো অনেকদিন থেকেই এ বাড়িতে আছে। মেয়ে হিসেবে ও খুব ভালো। দীপুর জন্য আমি ওকে রেখে দিতে চাই। তুই কি বলিস?
দুপুরবেলা যে মেয়েটির নতুন একটি রুপ আমার চোখে ধরা পড়লো, যে মেয়েটির জন্য আমার অন্তরে অনেকখানি জায়গা তৈরি হয়েছে, সেই মেয়েটিকে আমার ভাইয়ের সাথে মা বিয়ে দিতে চায় । দীপু যে শুধু আমার ভাই তা নয়, ও আমার জীবনের অর্ধেক। আমি বুঝতে পারছি না এখন আমার কী বলা উচিত। আমি অনেকক্ষণ মায়ের মায়াভরা মুখখানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মা আবারো বললেন,
- কিছু বলছিস না যে!
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
- ভালই হয়। কিন্তু দীপু ও নীলা এ বিষয়ে কিছু জানে?
- ওরা জানে না। তবে নীলার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে রাজি আছে।
রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমার ভাই যোগ্য পাত্র। লাখে একটা।
হঠাৎ করে মা যেন অনেক বেশি সুস্থ হয়ে গেলেন। মায়ের এ অবস্থা দেখে খুব ভালো লাগছে আমার। কাল সকালে আমার ভাই আসবে। বিয়ে হবে আমার ভাইয়ের । আমাকে বসে থাকলে চলবেনা। অনেক কাজ করতে হবে। মায়ের রুম থেকে বের হয়ে একটু খালপাড়ের দিকে গেলাম। একটু পরেই সূর্য ডুববে। চারদিক ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাবে। বুকের বাঁ পাশটায় কেমন যেন একটা ব্যাথা অনুভব করছি। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। খালপাড় থেকে একটু দূরে একটি বটগাছ। গাছটির নিচে বসলাম। চারদিক অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। গাছের শিকড়ের উপর শুয়ে পড়লাম। একটি দুটি করে আকাশের তারা গুনছি। রাত গভীর হতে লাগলো। মা বাড়িতে একা। আজ তো নীলা নেই। বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলাম।
মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
- এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি?
আমি মায়ের সাথে কখনো মিথ্যে বলিনি। শুধু আজ বললাম। একটু কাজ ছিল তাই বাজারে গিয়েছিলাম।
মা ভাত বাড়লো। আমি আর মা খাচ্ছি। হঠাৎ মা আমার মুখে খাবার তুলে দিলেন। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। মাও কাঁদছে। মা সর্বশেষ কবে আমাকে খাইয়ে দিয়েছিল আমার মনে নেই। আজ আবার মায়ের হাতে খেলাম।
সকাল হতে না হতেই দীপু চলে এসেছে। ওকে দেখে আমার আনন্দের আর সীমা নেই। দীপুকে জড়িয়ে ধরলাম। মায়ের চোখে পানি। দীপু মায়ের চোখের পানি মুছে দিল। মা অনেক পদের তরকারি রান্না করেছে। দুইভাই খুব মজা করে খাচ্ছি।
মা বললেন,
- দীপু, এবার কিন্তু বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। এখন আর কোনো অজুহাত দেখালে চলবেনা।
মায়ের কথা শুনে দীপু যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
মা আবারো বললেন,
- আমাদের নীলা অনেক ভাল মেয়ে। দেখতে শুনতেও ভাল। তোমাদের আপত্তি না থাকলে আমি নীলার বাবার সাথে কথা বলবো।
দীপু আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম,
- হ্যাঁ , নীলা বেশ শান্ত শিষ্ট। তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।
দীপু কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে খাচ্ছে।
অবশেষে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো। আগামী কাল বিয়ে। তাড়াহুড়ো করে অনুষ্ঠান করা যাবেনা। তাই আমি ও দীপু গিয়ে বউ নিয়ে আসবো। সময় সুযোগ বুঝে অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে। এটা মা ও নীলার বাবার সিদ্ধান্ত।
আমি ও দীপু একবিছানায় শুয়ে আছি। ছোটবেলায় আমরা একসাথেই ঘুমিয়েছি। আজ শেষবারের মত এক সাথে ঘুমাচ্ছি। দীপু বললো, ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
-আমি তো নীলাকে খুব একটা দেখিনি। কেমন মেয়ে বলতো?
আমি হেসে হেসে বললাম,
- অসাধারণ মেয়ে। যেমন চেহারা, তেমন গুণ। তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।
দীপু কী যেন ভাবছে। আমি অন্যপাশে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
গভীর রাত । সবাই গভীর ঘুমে অচেতন। দীপুর দিকে তাকালাম। নিষ্পাপ একখানা মুখ। এই মুখের সাথে একমাত্র নীলাই মানানসই। নীলার কাছে আমি বড্ড বেমানান। আমার ভাই আমার কলিজার টুকরা। ওর প্রতি আমার কোনো হিংসা নেই। তবুও নিজের মনকে মানিয়ে রাখতে পারিনা।
খুব ভোরে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো আমাদের। বউ আনার জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করেছি। গাড়িটি ইতিমধ্যে এসে হাজির। বিয়ের দিন সকালে নাকি পায়েশ খেতে হয়। মা জোর করে দীপুকে পায়েশ খাওয়ালেন।
সকাল দশটায় আমরা নীলাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। এতদিন মামার বাড়ি গিয়েছি। এখন যাচ্ছি ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি। ভাবতেই কেমন যেন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব আসে মনের মধ্যে। রাস্তার দু পাশে থই থই পানি। পানিতে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা শাপলা ফুল।
বরের সাজে দীপুকে বেশ মানিয়েছে। একদম সিনেমার নায়কদের মত লাগছে।
নীলাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। বিয়েতে জামাইয়ের প্রতি সবার অনেক আগ্রহ থাকে। কিন্তু দীপুর প্রতি আগ্রহটা একটু কম। কারণ জামাইকে সবাই আগে থেকেই চিনে।
আমার মনে উৎসাহের শেষ নেই। আজ যাদের বিয়ে হবে তাঁরা আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি আপন। নীলা এক টুকরা কলিজা, যাকে প্রতিদিন একটু একটু করে ভালোবেসেছিলাম। আর আমার ভাই আরেক টুকরা কলিজা, যার জন্য আমি জীবনও দিতে পারি। দুজন প্রিয় মানুষের বিয়ে হচ্ছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?
পাঁচ লাখ এক টাকার দেন মোহরে দীপুর সাথে নীলার বিয়ে হল। নিজের অজান্তে আমার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি পড়লো। এ পানির দিকে কারো নজর নেই। সকলের নজর বর ও কনের দিকে। খাওয়া দাওয়া শেষে এবার ফেরার পালা। গাড়িতে উঠলাম। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
গাড়ি চলছে। নীলা এতদিন ফুফুর বাড়িতে গিয়েছে। কিন্তু আজ যাচ্ছে শ্বশুর বাড়ি। আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে আর ওরা দুজন বসেছে পিছনে। বধূ সাজে নীলাকে কেমন লাগছে তা আমি দেখিনি। দেখতে ভয় লাগে , বড্ড ভয় লাগে। নিজেকে হারিয়ে ফেলার ভয়।
গাড়ি চলছে। রাস্তার দু পাশে থই থই পানি। পুরো বিল জুড়ে যেন শাপলার সমারোহ। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। আমি গাড়ি থেকে নামলাম। দীপু জিজ্ঞেস করলো,
- কই যাও?
আমি কিছু বলছি না। রাস্তার পাশে নৌকা বাঁধা আছে। নৌকায় উঠলাম। একটু দূরে ফুটে আছে অনেকগুলো লাল শাপলা। সবগুলো তুললাম। গাড়ির সামনে এসে দীপুকে বললাম,
- এগুলো নতুন দম্পতির জন্য উপহার।
দীপু হেসে হেসে বললো,
- তোর পাগলামি এখনো কমলো না।
আবারো গাড়ি চলছে। শাপলা ফুল দেখে নীলা কী ভাবছে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সব কিছু জানতে নেই। কিছু ঘটনা চিরদিন অজানা থাকাই ভালো।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো। বধূ বরণের জন্য মা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবার মৃত্যুর পর মাকে এত বেশি খুশি হতে দেখিনি।
আমাদের আসেপাশের বাড়িগুলোতে মিষ্টি বিতরণ করলাম।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো। একটা রুমকে সাজানো হয়েছে। এটা বাসর ঘর। স্বপ্নের বাসর। দীপু ও নীলাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। আমি মায়ের রুমে গেলাম। মায়ের মুখখানা একটু মলিন। আমাকে কাছে ডাকলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মা আমাকে একটু আদর করলেই আমার চোখে পানি এসে যায়। কিন্তু আজ পানি আসছে না। দেখলাম মায়ের চোখেই পানি। আমি পানি মুছে দিয়ে বললাম,
- মা, কী হয়েছে?
মা কিছু বলছে না। মায়ের কোলে মাথা রেখে আমি শুয়ে পড়লাম। মা বললেন,
- তুই নীলাকে পছন্দ করিস আমি তা জানি। কিন্তু আমি তোর জন্য কিছু করতে পারিনি বাবা।
মা আবারো কেঁদে ফেললো। আমি বললাম,
- মা, এসব কথা বাদ দাও এখন। তুমি ঘুমিয়ে পড়।
মা বললেন,
-নীলার বাবাকে বলেছিলাম ,নীলাকে দেয়ার জন্য। ওরা দীপুর জন্য রাজি হয়েছে। তুই ভাবিস না, তোর জন্য নীলার চেয়েও সুন্দরী মেয়ে এনে দিব।
আমি কী বলবো বুঝতে পারছি না। শুধু মায়ের চোখ থেকে পানি মুছে দিলাম। মায়ের রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে একটু একটু বাতাস বইছে। হাঁটতে হাঁটতে পুকুরপাড়ে চলে গেলাম। এখানেই আমার বাবার কবর। যখন অনেক বেশি কষ্ট হয় তখন এখানে ছুঁটে আসি। কবরের পাশে দাঁড়ালাম। বাবার কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কী সত্যি অযোগ্য? সবাই বলে আমি বলদ, আমি কি সত্যি বলদ? তবে দীপু কি মিথ্যে বলেছে? ও তো বলে আমি নাকি মাটির মানুষ। কবর থেকে কোনো আওয়াজ বের হয়না। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
আজ বাবা বেঁচে থাকলে এই গল্পটি ভিন্ন রকম হতে পারতো।
আমি বাবার খুব কাছে বসে আছি। চারদিকে ঘন অন্ধকার। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। আমি বাবাকে বললাম- বাবা,তোমার দীপু অনেক বড় হয়েছে । ও আজকে নতুন জীবন শুরু করেছে। ওর জন্য দোয়া করবে। বাবা কোনো উত্তর দেয় না। হয়তো দেয়, আমি শুনছি না। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
চারদিকে শুধু ঝিরিঝিরি বাতাসের শব্দ। যে শব্দ মনের শূন্যতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
লেখক- Ruhul Amin
Share this
Recommended
Disqus Comments
Subscribe Us
Followers
Followers
Subscribe
Total Pageviews
Categories
Tags
Recent Posts
3/recent/post-list
Recent in War
3/War/post-list
Subscribe Us
Follow Us
recent/hot-posts
Popular Posts
-
অনেক কষ্টে বাগানবাড়ির এই পাশটায় দুই রুমের যে বাসাটাতে ব্যাচেলর জীবনের লেজ টানার সৌভাগ্য হয়েছে, তার একটা নাম দিয়েছি বর্ডার। বর্ডার নাম দেয়ার ...
-
(১) এবার আমি-ই ইরাকে এই রাস্তায় একা ফেলে চলে যাচ্ছি। ইরা অনেকটা অপ্রস্তুত একটা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আমার চলে যাওয়াটা... খুব ভো...