আমি শ্রাবণী। আর এই মুহূর্তে লাল বেনারসি পড়ে বসে আছি বিয়ের আসরে। বর পক্ষ এসে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর কাজী সাহেব আমার কাছে আসবে। আর আমার সামনে সাদা পাঞ্জাবি পড়া শ্যাম বর্ণের যে ছেলেটা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে, কার কি লাগবে না লাগবে সেইগুলো দেখছে সে হলো আমার ফুফাতো ভাই পিয়াস। আমার থেকে ৩ মাস ১৩ দিনের ছোট। ছাত্র হিসাবে খুবই জঘন্য আর নিম্নমানের।ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
মেয়েদের হাত সাধারণত নরম হয় কিন্তু আমার হাত শক্ত কারণ ওর গালে থাপ্পড় মারতে মারতে আমার হাত শক্ত হয়ে গেছে। একসাথে পড়তাম দেখে আমার সাহায্যে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত কোন রকম পাশ করেছে। সমস্যাটা হলো ক্লাস সেভেনে উঠার সময়। আমি বৃত্তি পরীক্ষার জন্য ওকে তেমন সময় দিতে পারি নি আর বেচারা ক্লাস সেভেনে ৪ বিষয়ে ফেল করে...ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
শেষ থাপ্পড় -Bangla Story |
যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন থেকেই ওর ভিতর কেমন যেনো পরিবর্তন শুরু হলো। একদিন হঠাৎ করে এসে আমায় তুমি তুমি করে বলা শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, তুই আমাকে তুমি করে বলছিস কেন? ও মুচকি হেসে বললো,
--যেন পরবর্তীতে আর কোন সমস্যা না হয়।
আমি রেগে গিয়ে ওর গালে থাপ্পড় মেরে বলেছিলাম,
- আরেকবার তুমি করে বললে তকে জুতা খুলে মারবো...
এসএসসি পাশ করে আমি কলেজে ভর্তি হয় আর পিয়াস তখন ক্লাস টেনে। কলেজের কিছু নতুন বন্ধু বান্ধবী পেয়ে আমার দিন ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু সব সময় খেয়াল করতাম পিয়াস স্কুলে না যেয়ে আমার কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো...ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
১৩ নভেম্বর ছিলো আমার জন্মদিন। ১২ নভেম্বর বিকালের দিকে পিয়াসকে দুষ্টামি করে বলেছিলাম,
- কেউ যদি আমাকে গল্পের মত ১০১টা পদ্মফুল এনে প্রপোজ করতো।
সেদিন রাতে ফুফি আব্বুকে ফোন করে বলে পিয়াস আমাদের বাসায় এসেছে কি না। আব্বু বলে আসে নি। ফুফি কাঁদতে কাঁদতে বলে পিয়াসকে না কি খুঁজে পাচ্ছে না। কথাটা শুনে আমার বুকে কেমন জানি করতে লাগলো। সারারাত ঘুম হয় নি আমার। সবাই ওকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। আব্বু থানায় গিয়ে ডায়েরি করে আসলো। সকালে মন খারাপ নিয়ে কলেজে গেলাম। বান্ধবীদের সাথে বসে আছি। একটু পর খেয়াল করলাম স্কুল ড্রেস পরা সারা গায়ে কাঁদা মাখামাখি আর হাতে অনেকগুলো পদ্মফুল নিয়ে পিয়াস আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর আমার পাশে এসে হাটু গেড়ে বসে বললো,
--আমি তকে ভালোবাসি। যদিও আমি ভেবেছিলাম তকে সিনেমার নায়কের মত অনেক কিছু বলে প্রপোজ করবো কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো এই মুহূর্তে আমার কিছুই মনে নেই..
কথাটা শুনে আমার মেজার খারাপ হয়ে গেলো। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বান্ধবীরা হাসতে হাসতে আমায় বললো, তকে স্কুল ছাত্রও প্রপোজ করে।
রাগে সবার সামনে আমি পিয়াসকে থাপ্পড় মারি। আর হাঁদারামটা গাল ডলতে ডলতে বলেছিলো,
--প্রতিটা ভালোবাসার শুরু এই থাপ্পড় দিয়েই হয়...
আমি ইন্টার পাশ করে মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায় আর পিয়াস কোনরকম এসএসসি পাস করে ডিপ্লোমাতে ভর্তি হয়।
একদিন ও আমায় বলে,
-- তুই ডাক্তার আর আমি ইঞ্জিনিয়ার দেখিস আমাদের সন্তান হবে বিজ্ঞানী।
আমি আবার ওর গালে থাপ্পড় মেরে বলেছিলাম,
- আসছে আমার ভাতে মরা ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ে যদি করি তাহলে বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করবো। তকে কেন করবো? তাছাড়া আমি তোর বড় আপু। বড় আপুদের কিভাবে সম্মান করতে হয় জানিস না?
আমি হোস্টেলে উনার পর থেকে পিয়াসের শুরু হলো আমাকে পেইন দেওয়া। এমনিতেই পড়াশুনা নিয়ে খুব চাপে থাকতাম তার উপর ওর দিনে এত বার ফোন। ঠিক মত খেয়েছি কি না, কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না, কেউ ডিস্টার্ব করে কি না আরো কত কি। একবার সন্ধ্যার দিকে ও আমায় ফোন দিয়েছিলো আমার তখন হালকা ঠান্ডা লেগেছিলো। আমার কাশির শব্দ শুনে ও ফোন কেটে দিলো। রাত ১১ টার দিকে হোস্টেল সামনে এসে হাজির। আমি বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে বলেছিলাম,
- এত রাতে এসেছিস কেন?
আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
-- তোর জন্য কাশির ঔষধ এসেছি...
এর এমন বোকামি দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ঠাস করে গালে থাপ্পড় মেরে বললাম,
- এই মুহুর্তে আমার সামনে থেকে দূরে যা...
ফুফি যদি আমার পছন্দের কোন খাবার রান্না করতো পিয়াস সেই খাবার দিয়ে আমার হোস্টেলের সামনে এসে হাজির হতো। আমার বান্ধবীরা বলতো এমন একটা ছোট ভাই থাকলে আর কি লাগে। অবশ্য আমার বান্ধবীদের কাছে ওকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম ও আমার ছোট ভাই..
ওর সাথে প্রচন্ড খারাপ ব্যবহার করতাম। তারপরও আমি ওর মুখে সব সময় হাসি দেখেছি। পিয়াসকে সরাসরি একদিন বললাম,
- তোর যদি মনে হয় তোর এই পাগলামো কিংবা আমার প্রতি তোর এত ভালোবাসা দেখে আমি তকে ভালোবেসে ফেলবো তাহলে সেটা ভুল। প্রথমত আমি তোর বড় আর দ্বিতীয়ত আমি আমার লেভেলের কাউকে বিয়ে করবো তো মতো ডিপ্লোমা করে ও রকম কাউকে না...
সাকিবের সাথে আমার যেদিন বিয়ে ঠিক হয় সেদিন প্রথম দেখেছিলাম পিয়াসের গোমড়া মুখ। আমি হেসে হেসে ওকে বলেছিলাম,
- দেখলি একজন বুয়েট পাস করা ইঞ্জিনিয়ারের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তোর মত ভাতে মরা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে না...ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ও আমার কথা শুনে মাথাটা নিচু করে বললো,
-- ভালো থাকিস আপু...ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
যারা নিয়মিত গল্প পেতে চান তারা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন কেননা আইডিতে ইন্টারেস্টিং গল্প আছে তাই রিকোয়েস্ট দিয়ে দিবেন এক্সেপ্ট করে নিব ।
ওর মুখ থেকে হঠাৎ আপু ডাকটা শুনার পর কেন জানি মনে হচ্ছিলো আমার বুকের ভিতরের পাজরটা ভেঙে গেছে। সেদিনের পর থেকে পিয়াস আমাকে কখনো ফোন দেয় নি। রাতে যখন সাকিবের সাথে কথা বলতাম তখন কথা বলার সময় আমি শুধু পিয়াসের কথায় চিন্তা করতাম। যে পাগলামো গুলো আমার কাছে বিরক্ত মনে হতো সে গুলোকেই প্রচন্ড মিস করতে লাগলাম। আর আজ বিয়ের আসরে বসে উপলব্ধি করলাম আমি নিজের মনের অজান্তেই ওর মত ভাতে মরা ইঞ্জিনিয়ারকে ভালোবেসে ফেলেছি। সারাটা জীবন বাংলা মুভিকে ঘৃণা করে গেলাম। সেই আমার জীবন শেষ পর্যন্ত যে বাংলা মুভির মত হবে সেটা বুঝতে পারি নি...
আমি এখন পিয়াসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ ভরা পানি নিয়ে পিয়াসের গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললাম,
- তুই কি সারাজীবন আমার হাতের থাপ্পড় খেতে রাজি আছিস?
পিয়াস মাথা নিচু করে বললো
-- না
আমি অবাক হয়ে বললাম,
- কেন?
পিয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-- আগে তুই থাপ্পড় দিলে মনে হতো শিমুল তুলার বালিশ দিয়ে তুই আমার গালে স্পর্শ করেছিস আর আজকাল তুই থাপ্পড় দিলে মনে হয় লোহার হাতুড়ি দিয়ে আমার গালে আঘাত করেছিস..
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
- আমার হাত শক্ত হবার একমাত্র কারণ হলি তুই...
আমি আর পিয়াস বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। রাত এখন ১ বেজে ১২ মিনিট। আমরা দুইজন পাশাপাশি হাটছি। খুব ইচ্ছে করছে ওর হাতে হাত ধরে হাটতে। কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারণে ওর হাতটা ধরতে পারছি না। আর হাঁদারামটা আমার হাত ধরছে না। হয়তো থাপ্পড় খাওয়ার ভয়ে ধরছে না। এমন সময় কয়েকজন পুলিশ আমাদের আটকে বললো,
~ আপনারা কারা?
পিয়াস আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
-- আমরা স্বামী স্ত্রী..
কিন্তু কেন জানি আমি ওর হাতটা সরিয়ে মুখ ফসকে বলে ফেললাম,
- আমরা ভাই বোন...ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
এই মুহুর্তে আমরা দুইজন থানায় বসে আছি। এই প্রথম পিয়াস আমার দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আর এই প্রথম আমি পিয়াসকে দেখে কিছুটা ভয় আর অনেকখানি লজ্জা পাচ্ছি। মনে মনে ভাবছি, আজকেই হয়তো পিয়াসকে দেওয়া আমার শেষ থাপ্পড় ছিলো। এখন থেকে আর থাপ্পড় দিতে পারবো না বরং মাঝে মাঝে উল্টো আমার থাপ্পড় খেতে হবে..ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
লেখক - MD Foycal Ahmed Rafi