বর পক্ষ আজ আমাকে দেখতে আসবে! কিন্তু মনের মধ্যে তেমন কোন ফিলিংন্স নাই কারণ এর আগেও অনেকে অনেক বার দেখে গেছে আমাকে কেউ পছন্দ করেনি! ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
সবাই বলে ফিগার যা আছে খারাপ না কিন্তু মেয়ে কালো বেশি! এভাবে সবাই দেখে দেখে চলে যায়! কেউ ১০০০ টাকা হাতে গুজে দেয়, কেউ ৫০০/২০০ করে দেয় আবার কেউ কেউ মোটেও দেয় না! তাই আগামীকাল আমাকে দেখতে আসবে বললে ও আমার মাঝে নতুন কোন অনুভূতি সৃষ্টি হয় না! মা হালকা নাস্তা রেড়ি করেছে! আমি ঘর-দুয়ার ঝাড়ু দিয়ে খাটে নতুন একটা বেডসীট বিছিয়েছি! পাত্র পক্ষ আসলে মা আমাকে রেড়ি হতে বলে আর মনে মনে দোয়া পড়তে বলে! মায়ের চেহারাতে মলিন ভাব ভেসে আসছে! বুঝতেছি মায়ের মনের কষ্ট! আমার পর পর আমার আরো তিনটি ছোট বোন বড় হয়েছে! আমি তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি! আমার জন্য বর আসলে আমার ছোট বোনকে পছন্দ করে বর পক্ষ! বাবাও আর কি করবে সামান্য রিক্সা চালায়!! আমার লেখাপড়ার খরচ আমি নিজে-ই চালাতাম টিউশনি করে!! সাদা একটা সুতির জামা পড়ে গেলাম পাত্র পক্ষের কাছে! সালাম দিয়ে বসে পড়লাম! এক ভদ্র মহিলা উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, মা তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে! আমার ঘরের লক্ষী তুমি! এমন একটি লক্ষী মেয়ে চেয়েছিলাম আমি! এমন বলে ভদ্র মহিলাটি আমার হাতে দুই হাজার টাকা আর একটা আংটি পরিয়ে দেয়! পাশে একটা স্মার্ট ছেলে বসে আছে উনার হাসি দেখে বুঝতে পারলাম উনি ছেলে যার জন্য আজকের আয়োজন!! আমি মনে মনে খুশি হয়েছি! যতোটা না খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি আমাকে কিভাবে পছন্দ করলো! খেয়াল করলাম দরজার ওপাশ থেকে মা মুচকি মুচকি হাসছে! মায়ের হাসি দেখে আমারও ভালো লাগলো! দুই পক্ষে মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে! ছেলের পক্ষের কোন আবদার নাই এরা শুধু মেয়ে চায়! মা তো মেলা খুশি! ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
ঘোমটা মুখে বসে আছি বিয়ের দিন!
সবাই বউ দেখতে আসে! মনে মনে একটু কষ্ট লাগছে! ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি বর বউকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়! মালা বদল করে! কিন্তু আমাকে কিছু-ই করলো না। ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
সাবিহার বাসর রাত! ৪/৫ জন মহিলা সাবিহাকে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বললো,একটু সাবধানে থেকো!
সাবিহার মনে অজানা এক ভয় আর ভালোলাগা দোল খাচ্ছে! সাবিহা গল্পের বইয়ে, নাটক সিনেমায় এবং বান্ধবীদের মুখে অনেক বার শুনেছে বাসর রাতের কথা! তাই সাবিহা অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে পাঞ্জাবী পরা মহান পুরুষটি(সাবিহার স্বামী)দেয়ালের সাথে পিট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে! সাবিহাকে রুমে দেখার সাথে সাথে আ্যঁ ওঁ বলে কি যেন বলতে চেয়েছে! সাবিহা প্রথমে বুঝতে পারেনি কি বলেছে! সাবিহা স্বামীকে সালাম করার জন্য পা ছুঁবে
এমন সময় সাবিহার স্বামী সাবিহাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর আ্যঁ ওঁ করে করে চিৎকার করে উঠে! সাবিহা অবাক হয়ে যায়! বুঝতে পারে তার স্বামী পাগল! বোবা কথা বলতে পারে না! স্বামীর এই আচরণ দেখে সাবিহা স্তব্ধ হয়ে যায়! চিৎকার করে কেঁদে উঠে সাবিহা! হে খোদা, আমি কি অপরাধ করেছি তোমার কাছে ! কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটে পড়ে সাবিহা! সারা পৃথিবী যেন ভেঙ্গে সাবিহার মাথার উপর পড়ে !সাবিহা কেঁদে কেঁদে বলে, খোদা এটা কি হলো! আমি তো এমন চাইনি খোদা! সাবিহা স্তব্ধ হয়ে রুমের এক কোণে বসে সারাটা রাত অশ্রুসিক্ত নয়নে পার করে দেয়!
ভোর হলে সাবিহার স্বামী ঘুম থেকে উঠে কি যেন চিৎকার করে করে বলে বলে বাহিরের দিকে চলে যায়! কয়েকটা মহিলা এসে সাবিহাকে জিজ্ঞাস করে তুমি ঠিক আছো তো? সাবিহা মাথা নেড়ে জবাব দেয় হ্যাঁ! আমি ভালো আছি! কাপড়চোপড় ভাজ করে নেয় সাবিহা! চলে যাবে বাপের বাড়িতে! কিভাবে দিন পার করবে একটি পাগল স্বামীকে নিয়ে!তা ছাড়া বোবা! কানে শুনতে পায় না! কাপড়চোপড় নিয়ে সাবিহা ঘর থেকে বাহিরে পা দিবে তখনি মনে পড়ে তিনটি ছোট বোন আর রিক্সা চালক বাবার কথা!! হাত থেকে ব্যাগ পড়ে যায় সাবিহার! আমি যদি এখন বাপের বাড়িতে চলে যাই তাহলে আমার তিনটি বোনের বিবাহ হবে না!বিয়ে হলেও আমার মতো পাগল বোবা স্বামীর ঘর করতে হবে!না না! আমি যাবো না! দরকার হলে এখানে কাজ করে খাবো তবু যাবো না আমি! আমার তিনটা বোনের জীবন আমি এভাবে নষ্ট করতে পারবো না! ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
শ্বশুর ঘরের সব কাজ সাবিহা একাই করে! সাবিহা শ্বাশুরি আর ননদের সেবাযত্ন করতে থাকে!সাবিহা ঘরের কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখে সারাক্ষণ !সারাদিনে মিলে একবারও রুমে আসে না সাবিহা! রুমে এসেই বা কি করবে? কে-ই বা দেখবে সাবিহার ভরাট যৌবন!!
একদিন সাবিহা জ্বরে কাতরাতে থাকে! তার শাশুরি গায়ে হাত দিয়ে দেখে প্রচণ্ড জ্বর! ডাক্তার এসে ঔষধ দেয়! সাবিহার শাশুরি যথেষ্ট ভালো মহিলা! ছেলের এই অবস্থার জন্য সাবিহার শাশুরি সাবিহাকে মেয়ের মতো করে ভালোবাসে! কিন্তু এই ভালোবাসায় কি সাবিহার মন ভরে? সাবিহা চায় স্বামীর ভালোবাসা,আদর, সোহাগ!
সাবিহা চায় তার স্বামী তার কপালে চুমু দিয়ে বলুক, চিন্তা করো না সোনা! তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে!
কিন্তু না!
সাবিহাদের মতো গরিব ঘরের কালো মেয়েদের এগুলা আশা করা বড্ড পাপ! সাবিহারা প্রতিনিয়ত নিজের ভালোবাসা আর ইচ্ছে শক্তি শুধু দাফন করতে শিখেছে!! এভাবে দিনের পর দিন পার করে যাচ্ছে সাবিহা!
ভালোবাসা দিয়ে সাবিহা চেষ্টা করে যায় স্বামীকে সুস্থ করতে! কিন্তু না! সাবিহা বিনিময়ে পায় শুধু স্বামীর অত্যাচার! ! কতো রাত যে সাবিহাকে লাত্থি মেরে
খাট থেকে ফেলে দিয়েছে তার কোন হিসাব নাই! সুস্থ হবার কোন লক্ষণ দেখা যায় না! তবু সাবিহা হাল ছাড়ে না! সাবিহার বিয়ের বয়স আজ এক বছর নয় মাস! সাবিহা এভাবে প্রতিদিন ঘরের কাজ করে রাতে রুমে এসে খাটের এক কোণে স্বামির পায়ের পাশে ঘুমিয় পড়ে! আজ কেন যেন সাবিহার চোখে ঘুম আসছে না!
সাবিহা ছটপট করতে থাকে! সাবিহা প্রতিরাতে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজায়! এই কান্না কাউকে দেখানোর নয়! কিন্তু আজকে একটু বেশিই মন খারাপ লাগছে সাবিহার ! সাবিহার বুক ফেটে কান্না আসছে কিন্তু মুখ ফুটে বলার মতো কেউ নাই সাবিহার!! সাবিহা মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতে সাবিহার স্বামীর ঘুম ভেঙ্গে যায়! সাবিহার স্বামী আসতে করে সাবিহার মাথার উপর হাত রাখতেই সাবিহা চমকে উঠে! যেন সারা পৃথিবী কেঁপে উঠছে! মনে হচ্ছে চার দিকে বজ্রপাত হচ্ছে! একি.............??
সাবিহা স্বামীর বুকে আলতো করে মাথা রাখে! সাবিহা যেন স্বর্গ খুঁজে পেয়েছে! এই সুখ যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখ! সাবিহা ভোরের স্নান সেরে কিচেনে যায় সবার জন্য নাস্তা তৈরি করতে! সাবিহার আজকের ভোরটা ভিন্ন একটা ভোর! এমন একটি ভোর সাবিহা আশা করেছিলো!!
কিছু দিন পরের কথাঃ
সাবিহার প্রচণ্ড বমি হচ্ছে! মাথা ঘুরছে!যেন শরীরটা অচল হয়ে আছে! সাবিহা অনুভব করতে পারছে সাবিহার মাতৃত্ব সার্থক হতে যাচ্ছে! ভাবতেও সাবিহা যেন স্বর্গ হাতে পাবার মতো সুখ অনুভব করছে! সাবিহা এখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা! একদিন সাবিহার শাশুরি খেয়াল করে সাবিহার পেটে বাচ্চা আছে! সাবিহার শাশুরির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে!! সাবিহার শাশুড়ি সাবিহার চুলের মুঠি ধরে বলে, এই ডাইনি, তুই আমার ঘরে থেকেকার সাথে নষ্টামি করে পোয়াতি হয়েছিস! ঘর থেকে এখন বের হ! আমার ঘরে পাপির কোন জায়গা নাই! তুই পাপি......
......তুই পাপি বলে সাবিহাকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে সাবিহার শাশুরি!
সাবিহা যে কিছু বলবে, সে সুযোগ তারা সাবিহাকে দিলো না! ঘর থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো সাবিহাকে! কার কাছে যাবে সাবিহা? বাহিরে কিভাবে মুখ দেখাবে ! আদৌ কি সাবিহার স্বামী তার শক্তি দিয়ে কাউকে বুঝাতে পারবে এটা তার অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান ! সাবিহাও বা সবাইকে কিভাবে বুঝাবে এটা যে তার ধৈর্য্যের ফল! প্রতি রাতের নিরব অশ্রুর সাধনা তার!
কোথায় যাবে সাবেহা! ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
বাপের ঘরে গেলে পাড়া-পড়শি সবাই সাবিহাকে কলঙ্কিত বলবে! সবিহার ছোট বোনদের আর কখনো-ই বিয়ে হবে না! সাবিহা অশ্রু মুছতে মুছতে হাঁটতে থাকে অজানা গন্তব্যে!! ভালবাসার গল্প, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, bangla story, bangla golpo, valobasar golpo
আদৌ কি কোথাও সাবিহার ঠাই হবে......??